স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি: বিপরীত লিঙ্গের কোন বিষয়টি আপনাকে আকৃষ্ট করে?

মাধবী লতা

ব্যক্তি বিশেষে তার যৌনাকর্ষণে বিভিন্ন বিষয় প্রভাব ফেলে থাকে। কোন সম্ভাব্য যৌনসঙ্গীর কোন কোন বিষয় আমাদের আকৃষ্ট করে? প্রকৃতপক্ষে, দুজন মানুষের মধ্যে রসায়ন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে তবে ব্যক্তিত্বের কিছু বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা আমাদের একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট করে থাকে। কিছু লোক শারীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন গায়ের রং, উচ্চতা, স্বাস্থ্য, মুখাবয়ব ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হয়। আবার কেউ কেউ ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের দিকে আকৃষ্ট হয়। “স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি” শব্দটি বর্ণনা করে বিপরীত লিঙ্গের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। আরবান ডিকশনারিতে এই শব্দটির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, স্যাপিওসেক্সুয়াল ব্যক্তি এমন একজন যিনি বুদ্ধি এবং মানবমনকে সম্ভাব্য যৌন সম্পর্কের জন্য সর্বাধিক যৌন আকর্ষণীয় বলে মনে করেন।

স্যাপিওসেক্সুয়ালরা বরাবরই বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, মস্তিষ্কই সবচেয়ে আকর্ষণীয় অঙ্গ। স্যাপিওসেক্সুয়াল ব্যক্তিরা বিপরীত লিঙ্গের মস্তিষ্ক দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে থাকে। ফোরপ্লে হিসাবে স্যাপিওসেক্সুয়াল ব্যক্তি দার্শনিক, রাজনৈতিক, বা মনস্তাত্ত্বিক আলোচনায় আগ্রহী হতে পারে কারণ এটি তাদের জেগে উঠতে সাহায্য করে। আকর্ষণটি সবসময় যৌন সংসর্গের দিকে ধাবিত না করলেও, প্রায়শই করে থাকে। কখনও কখনও প্লেটোনিক বন্ধুত্বগুলি স্যাপিওসেক্সুয়ালিটির কারণেও গড়ে ওঠে। এই বৌদ্ধিক সমন্বয়টি কেবল সম্পর্কটিকে উস্কে দেয়। এরকম আকর্ষণ বেশিরভাগ সময়েই কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় এবং এর নেপথ্যে কাজ করে বুদ্ধিমান মানুষের সাথে সংযুক্ত হওয়ার বাসনা । এ ধরনের ইচ্ছা সবসময় যৌন সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায় না। যারা স্যাপিওসেক্সুয়াল তারা অন্য ব্যক্তির চিন্তা দ্বারা উদ্দীপিত হয়। এটি মূলত কোনো ব্যক্তির মস্তিষ্কের প্রতি প্রেম। কখনও কখনও, স্যাপিওসেক্সুয়াল ব্যক্তিদের “নিম্ফোব্রেনিয়াকস” বলা হয় যারা ব্যক্তির বৌদ্ধিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রেমে পড়ে। লাইব্রেরিয়ান, শিক্ষক, অধ্যাপক এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রায়শই স্যাপিওসেক্সুয়াল ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু হন। স্যাপিওসেক্সুয়ালদের কাছে মস্তিষ্ক শরীরের সবচেয়ে যৌনাবেদনময় অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয় বলে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় জড়িত ব্যক্তিরা স্যাপিওসেক্সুয়ালদের চোখে অধিকতর স্মার্ট এবং সেক্সিরূপে ধরা দেন । কেননা তারা অনেক বৈচিত্র্যময় বিষয়ে পড়াশোনা করে থাকেন এবং তাদের সাথে কথোপকথনে স্যাপিওসেক্সুয়ালরা তৃপ্তি বোধ করেন।

স্যাপিওসেক্সুয়ালদের প্রেম ও যৌনতার অনুভূতি আবর্তিত হয় মস্তিষ্ককে ঘিরে। শারীরিক সৌন্দর্য বা সামাজিক অবস্থানের চেয়ে তাদের কাছে অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায় বিপরীত লিঙ্গের মানুষটির বুদ্ধিমত্তা। বিপরীত লিঙ্গের মানুষটির গভীর চিন্তাশক্তি ও জ্ঞানের প্রতি ইতিবাচক মানসিকতা তাদের প্রচণ্ড আকর্ষণ করে। তারা বিশ্বাস করে, কারো যৌন আকর্ষণ শরীরে নয়, বরং তার মেধায় লুকিয়ে থাকে। স্যাপিওসেক্সুয়ালেরা তাই কখনোই হুট করে প্রেমে পড়ে না। যেহেতু শারীরিক সৌন্দর্য তাদের টানে না, তাই চট করে প্রেমেও পড়ে না। প্রেমে পড়তে তাদের সময় লাগে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রেমের আগে হয় বন্ধুত্ব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক ও বৌদ্ধিক সংযোগ হলে তবেই আসে প্রেম।মেধা বা বুদ্ধির আকর্ষণই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও হলেও শারীরিক আকর্ষণ যে একেবারেই নেই, তা নয়। এক্ষেত্রে তারা যৌনাকর্ষণ অনুভব করে তাদের বিপরীত লিঙ্গের মেধা, মনন ও বুদ্ধিমত্তার কারণে। শারীরিক সৌন্দর্য এখানে একেবারেই গৌণ। সম্পর্কের জন্য কখনোই চেহারাটা বড় হয়ে দাঁড়ায় না তাদের কাছে। স্যাপিওসেক্সুয়ালরা কাউকে ভালোবাসলে ধরে নেয়া যায় সেটা খুব গভীর ভালোলাগা থেকে উৎসারিত হয়েছে । কারণ এরা সহজে কাউকে পছন্দ করতে পারে না। বিপরীত লিঙ্গের মানুষটার সঙ্গে মেধা ও বৌদ্ধিকভাবে সামঞ্জস্য পাওয়া গেলে তারপর আসে তাকে ভালোলাগার বা ভালোবাসার বিষয়টি। ফলে যখন কাউকে তারা ভালোবাসে সে ভালোবাসা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *