উর্দু গল্পের দিকপাল সাদাত হাসান মান্টো

তাহা ইয়াসিন

সাদাত হাসান মান্টো ( ১৯১২-১৯৫৫ ) যাঁকে বলা হয় উর্দু গল্পের দিকপাল। আমাদের চিরাচরিত ধ্যান ধারণার মার্গে বর্শা নিক্ষেপ করেছেন তিনি। সেই বর্শা নিজের বুকেও রক্ত ঝরিয়েছে। রক্ত ঝরাতে ঝরাতে নিজে তিনি উন্মাদ হয়েছেন – জ্ঞান হারিয়েছেন। উর্দু সাহিত্যের জন্যও হয়ে উঠেছিলেন আতঙ্ক। তিনি উর্দু সাহিত্যের একটি ইতিহাস, একটি কন্ঠস্বর, বলা চলে একটি বিপ্লব। সমাজের মিথ্যা,ভণিতা, মুখোশকে তিনি উন্মোচিত করেছেন।

মান্টো জন্মছিলেন অমৃতসর জেলার সোমবালা গ্রামে। অনুবাদক হিসেবে সাহিত্য জীবনে তাঁর প্রবেশ। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের পটভূমিতে লেখা তাঁর প্রথম গল্প ‘ তামাসা। ‘ এই গল্পের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় তাঁর সৃজনশীল প্রতিভা। ওই সময় তিনি ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও রুশ সাহিত্যের চিরায়ত গ্রন্থসমূহ পাঠ করে ফেলেন। চাকরির সন্ধানে যান লাহোর এবং একটি পত্রিকায় চাকরি পান। পত্রিকার মালিকের সাথে মতবিরোধ দেখা দিলে কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার কর্মান্বেষণ শুরু করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বোম্বে শহর ছিল মনোরম এবং কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত স্থান। মান্টো সেখানে গমন করেন। চাকরি পান সিনেমা সাময়িকী পত্রিকায়। বোম্বে অবস্থান আস্তে আস্তে পাকাপোক্ত হয়। সেখানেই এই উপমহাদেশের সব বড় বড় তারকাদের সাহচর্য লাভ করেন। অনেকের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। ১৯৪১ সালে সিনেমা সাময়িকীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে অল ইন্ডিয়া রেডিওর দিল্লী কেন্দ্রে চাকরি নেন। এখানেও তাঁর অনেক গল্প প্রচারিত হয়। এক সময় সিনেমার কাহিনীকারও ছিলেন।

১৯৪৮ সালে মান্টো চাকরি-বাকরি সব বাদ দিয়ে ফিরে আসেন লাহোর। সেখানেই স্থায়ী বসবাস করার জন্য মনস্থির করেন। এখানে বসবাসকালীন মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৮ জানুয়ারি ১৯৫৫ সালে স্ত্রী এবং তিনজন শিশু-কিশোরি মেয়ে রেখে মারা যান।

মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তিনি লিখেছেন, ‘ আমার বর্তমান জীবন নানা দূর্যোগ ও দূর্ভোগে পরিপূর্ণ। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রমের পর আমার দৈনন্দিন সাংসারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য সামান্য উপার্জন করি। এই বেদনা আমার যক্ষ্মা রোগের ন্যায় সর্বদা বুকে টন টন করে। আজ যদি আমি চোখ বুজি তাহলে আমার স্ত্রী ও তিন তিনটি শিশু-কন্যার দেখা-শুনার দায়িত্ব কে নেবে? ‘

মান্টোর জীবন এত কন্টাকীর্ণ এবং লড়াই-সংগ্রামের ছিল যে একটা সময় পর তার চাপ শরীরে পড়ে এবং তাঁর বেঁচে থাকার সব আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যায়। মান্টোর গল্পের পটভূমির মতোই আরেক বেদনাদায়ক তাঁর জীবন ইতিহাস।

সাদাত হাসান মান্টো

তাঁর ‘ লাইসেন্স ‘,এবং ‘ শহীদ সাজ বা শহীদ শহীদ খেলা ‘ গল্পদুটির সামাজিক প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা এখানে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে।

প্রথম গল্প ‘ লাইসেন্স ‘এ সমাজে নারীর অবস্থানের কথা বলা হয়েছে । নারীদের ভালোর জন্য মন গলেনা সমাজে এমন দরদী পুরুষের অভাব নেই। ভালোটা পুরুষের ইচ্ছেমতোই। পুরুষ তাকে খুঁচিয়ে নাড়িয়ে আনন্দ পেতে চায়। এর মধ্যেই তারা একটু ভালো থাক । চাওয়াটা ওইটুকুই। নারী নিজের কর্মের মাধ্যমে আত্নমর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে, কোন পুরুষের সাথে ঢলাঢলি না করে বেঁচে থাকুক, এটা কেহই মেনে নিতে চায় না, মেনে নিতে কোথায় যেন লাগে।

‘ লাইসেন্স ‘- গল্পে সমাজে নারীর সেই অসহায়ত্বই ফুটে ওঠেছে। গল্পের সামাজিক প্রেক্ষাপট পাকিস্তানের, কিন্তু ঘটনা দক্ষিন এশিয়ায় সার্বজনীন। পুরুষ শাসিত, পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় নারীর অবস্থান এখানে একই। নারীকে ভোগ্যপণ্য ছাড়া অন্য কিছু মনে করা হয় না। পণ্যসামগ্রীর মতো নারীকে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে সব পুরুষ নিজেদের ইচ্ছমাফিক ভাগাভাগি করে ভোগ করতে পারলে খুশি থাকে। নারীর যেন দেশ,কাল বলে কিছু নেই। নারী হিসেবে যৌনকর্মের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ছাড়া তার আর অন্য কোনো গুরুত্ব নেই।

লাইসেন্স গল্পের কাহিনীঃ পাকিস্তানের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে এক ঘোড়া চালিত গাড়ি টাঙ্গা চালক আবু। সে অন্য চালকদের মতো নয়। ভালো কাপড়-চোপড় পরে টাঙ্গা চালায়। এক দিন গুজরাট থেকে নাস্তি নামে এক মেয়ে এসেছে, সে স্টেশন যাবে। আবু তাকে দরদাম করে টাঙ্গায় ওঠায় । যেতে যেতে সে নিজে থেকে কথা বলা শুরু করে। মেয়েটাকে এর মধ্যেই ভালোবেসে ফেলে আবু। আবুর কেন যেন মেয়েটিকে অনেক ভালো লাগে। তাই নিজে থেকে কথা বলা শুরু করে। কথা বলতে বলতে সে ভালোবাসার কথা জানায়। ‘ সেই ষোল-সতেরো বছরের তরুণীর উচ্চারিত যৌবন তার হৃদয়কে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল। ‘

ছিপছিপে সুঠাম উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের তরুণী নাস্তিকে আবু বলে, ‘ এই টাঙ্গা এই ঘোড়া আমার জীবনের চেয়েও প্রিয়। আমি একাদশ পীরের কসম খেয়ে বলছি, এই টাঙ্গা-ঘোড়া আমি বেচে তোর জন্যে সোনার বালা গড়ে দেব। নিজে ছেঁড়া-ফাঁটা কাপড় পরব, কিন্তু তোকে রাজকুমারী সাজিয়ে রাখব। ওয়াদহু -লা শারিকের কসম খেয়ে বলছি জীবনে এই আমার প্রথম প্রেম। তুই যদি আমার না হোস তবে তোর সামনেই আমার গলা কেটে ফেলবো। ‘ নাস্তি এরকম একনিষ্ঠ আবেদনে বিয়ে করতে রাজী হয় এবং তারা বিয়ে করে।

বাধা হয়ে দাঁড়ায় নাস্তির পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে আবুর নামে মামলা করা হয়। এর কারণ নাস্তির বয়স ১৮ কম ছিল। সে সময়ের ব্রিটিশ আইনে আবুর ২ বছরের জেল হয়। আইনের ন্যায়কে অবজ্ঞা করার কারণে জেল হওয়ার যে বিধান সেটি কিন্তু মান্টো গল্পে এড়িয়ে যাননি।

আবু জেলে গেলেও নাস্তি আবুর বাড়িতেই থাকে। পিতামাতা তাকে নিয়ে যেতে চায়। নাস্তি বলে সে আবুকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে তাই স্বামীর বাড়িতেই থাকবে। বিয়ে সে নিজের ইচ্ছে থেকে করেছে, এতে আবুর কোনো দোষ নেই। নাস্তি স্বামীর ভিটেতে পড়ে থাকে

আবু জেল থেকে বের হয়। বের হওয়ার অল্পদিন পরেই সে যক্ষায় আক্রান্ত হয়। কিছুদিন রোগ ভোগের পর আবু মারা যায়।

নাস্তি টাঙ্গাটি আবুর বন্ধু দিনুকে দিনে পাঁচ টাকায় ভাড়া দেয়। দিনু কয়কদিন পর ভাড়া কম দেয়া শুরু করে এবং একটা সময় নাস্তির ঘরে উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে। নাস্তিকে বিয়ে করতে চায় দিনু। নাস্তি জানায়, সে আবুর স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে,কাউকে আর বিয়ে করবে না ।

একরাতে এক পড়শী দেয়াল ডিঙিয়ে নাস্তির ঘরে ঢোকে। এভাবে আরো অনেকে তার একা থাকার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। এই উপমহাদেশে যেটা এখনো সচরাচরই দেখা যায়। যুবতি মেয়ে একা ঘরে আছে এটা ভাবলে আশপাশের দশ বাড়ির পুরুষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়, সে যে কোনো বয়সের, যে কোন ধর্মের কিংবা বর্ণেরই হোক। নানা বিপত্তির পর নাস্তি সিদ্ধান্ত নেয় সে নিজেই তার
টাঙ্গাটি চালাবে। সে চালানো শুরু করে। কিন্ত অন্যান্য টাঙ্গা চালকরা একজন মেয়ে চালক হিসেবে, মিউনিসিপালিটিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এবং তার টোঙা চালানোর লাইসেন্স নিয়েও প্রশ্ন তোলে। সুন্দরী একজন মেয়ে টাঙ্গা চালায় এ নিয়েও শহরে কানাঘুষা শুরু হয় এবং এসব কিছুই মিউনিসিপালিটির কর্ণগোচর হয়।

মিউনিসিপালিটি কর্তৃপক্ষ নাস্তিকে ডেকে পাঠায়। তাকে জানায়, তার টোঙা চালানোর লাইসেন্স নাই। লাইসেন্স ছিল তার স্বামী আবুর। সেটা দিয়ে সে চালাতে পারবে না। এছাড়া সে মেয়ে, মেয়েদের টোঙা চালানোর লাইসেন্সও দেয়া হয়না । তাদেরকে অন্য লাইসেন্স দেয়া হয়। যে লাইসেন্স নিয়ে মেয়েরা নির্দিষ্ট পাড়ায় ঘর ভাড়া করে দেহ ব্যবসায় যুক্ত হতে পারে । নাস্তিও আবেদনের মাধ্যমে সেই লাইসেন্স পেতে পারে।

নাস্তিকে মিউনিসিপালিটি কমিটি অমুক পাড়ায় একটা ভালো ঘর পছন্দ করতে বলে । ঘর নিলে তাকে সেই ব্যবসার লাইসেন্স দেয়া হবে, কিন্তু টাঙ্গার লাইসেন্স নয়। কর্তৃপক্ষ সেই সাথে আবুর লাইসেন্সটি বাতিল করে দেয়।

উপায়হীন হয়ে নাস্তি টাঙ্গা বিক্রি করে ।

তারপর সে আবুর কবর জিয়ারতে যায় । কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে কবরকে সম্বোধন করে বলে,

‘ আবু তোর নাস্তি আজ মিউনিসিপাল কমিটির দপ্তরে মারা গিয়েছে!’
শুধু এই কথাটুকু বলে ও চলে এল। পরের দিন ও আর্জি পেশ করল। নিজের দেহ বেচার লাইসেন্স ও পেয়ে গেল। ‘

সমাজ কিভাবে একটা মেয়েকে দেহ ব্যবসা করার জন্য বাধ্য করে সেই চিত্রটি এই গল্পে ফুটে উঠেছে। আমরা সমাজে সকলে ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকি কিন্তু সুযোগ পেলেই এরকম ঘটনা ঘটাতে দ্বিধা করিনা।

মান্টোর আলোচ্য ২য় গল্প ‘ শহীদ সাজ বা শহীদ শহীদ খেলা। ‘ এটির পটভূমিতে উঠে এসেছে রাষ্ট্রের আরেক রকম চিত্র।

গল্পটিতে এক মারোয়ারি ব্যবসায়ীর কথা তুলে ধরা হয়েছে । মারোয়ারি ব্যবসায়ী ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ব্যবসায়ী সুবিধার কথা ভেবে নতুন দেশ পাকিস্তান যায়, তার চিন্তা ছিল সেখানে গেলে ব্যবসা ভালো জমবে। পাকিস্তানে গিয়ে সে প্রথমে রিফ্যুজি ক্যাম্প তৈরী করে। অনেকগুলো ক্যাম্প তৈরীর পর সে দেখে ক্যাম্পে প্রতিদিন নতুন নতুন রিফ্যুজি আসে। ক্যাম্প ভরে যেতে থাকে। অনেক ক্যাম্প তৈরী করতে হয় তাকে। ব্যবসায়ী হিসেবে সে সারাজীবনই সফল, তবে রিফ্যুজি ক্যাম্পে তার লাভ ভালো হচ্ছিল না। সে ভাবে এই ব্যবসা করলে গোটা পাকিস্তানই একদিন রিফ্যুজি ক্যাম্প হয়ে যাবে।

তার মাথায় নতুন চিন্তা আসে ; ক্যাম্প ব্যবসা বাদ দিয়ে সে ভালো কাজ করবে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হজ্বে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু হজ্বে যাওয়ার আগে জানতে পারে, হজ্বের সময় বহু লোক পায়ের তলায় চাপা পড়ে মারা যায়। আর যারা মারা যায় তারা সবাই শহীদের মর্যাদাও পায় এবং বেহেস্তে গমন করে। আর বেহেস্তে গমন মানেই অনেক সুখেও থাকা । হজ্বে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে সে ভাবে মানুষকে শহীদ বানানোর ব্যবসাটাই অনেক ভালো।

প্রথমে সে তার ক্যাম্পের এক বুড়ি মহিলাকে শহীদ বানানোর পরিকল্পনা করে। কারণ মহিলাটি তার ক্যাম্পে অনেক অসুবিধায় ছিল। মহিলাকে ভালোভাবে খাওয়ানোর পর ট্টেনের নীচে শহীদ করানোর জন্য নিয়ে যায়। ট্টেন লাইনের উপর তাকে শুইয়ে দিয়ে সে বলে একটু পরে ট্টেন আসলেই সে সরাসরিভাব বেহেস্তে যেতে পারবে এবং সেখানে তার যাবতীয় কষ্টের নিরসন ঘটবে। এরপর খুব সুখেও থাকতে পারবে।

ট্টেনের হুইসেল শুনে ওই বৃদ্ধা দৌড় দেয়। ব্যবসায়ী লক্ষ্য করে যে, একজন অচল বৃদ্ধাও মৃত্যু ভয়ে দৌড় দেয়। সে একথা ভেবে নিশ্চিত হয় বেহেস্তে অনেক সুখে থাকার আশ্বাস থাকলেও মানুষ মৃত্যুর কথা শুনে ভয় পায়। আসলে কেউ মরতেও চায় না। সে পড়ে যায় মহা যন্ত্রনায়। আবার ভাবতে থাকে।

ভাবতে ভাবতে এক সময় তার মাথায় বুদ্ধি চলে আসে। আচ্ছা, ঠিক আছে ; অন্যভাবে শহীদ বানানোর ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে দৌড় দেয়ার কোন অপশন না থাকে। ভালো ব্যবসায়ী হিসেবে তার মাথায় সব সময়ই ব্যবসার অনুকুলে ভালো চিন্তা আসে বলে তার ধারণা। তখন সে আরেকটা পথ বের করে।

সে জেনেছে হাসপাতাল,হোটেল,স্কুল,কলেজ, ইত্যাদি ভবন ধবসে যারা মৃত্যুবরণ করে তাদেরকেও শহীদ বলা হয় এবং তারাও সরাসরি বেহেস্তে চলে যায়। তার কাছে এই বুদ্ধিটা ভাল লাগে । কারণ এর মধ্যে দৌড় দিয়ে পালানোর কোন অপশন নেই। আর এই ভবন ধবসে পড়ে মানুষ মারা গেলে সরকার উভয় পক্ষকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দেয়। একটু লাইন-ঘাট করতে পারলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে আরো বেশি স্থাপনা বানানো যায়। সে একের পর এক হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান তৈরী করে। এসব ভবন এমনভাবে নির্মাণ করা হয় যাতে কিছু সংখ্যক মানুষ উঠলেই ভবনটি ধবসে পড়ে এবং সকলে একসাথে মারা যায় এবং শহীদ হয়।

তার নির্মাণ করা অনেক ভবন প্রায়ঃই ধবসে পড়া শুরু হয় এবং সেই খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হতে থাকে । যারা মারা যায় তারা সকলেই শহীদের মর্যাদা পায় এবং সকলেই হয়ে যায় বেহেস্তবাসী। পরিবারকে বিরাট আয়োজন করে রাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ দেয়। এই ক্ষতিপূরণের দৃশ্য সব রকম মিডিয়ায় এমনভাবে প্রচার করা হয় যে, সরকার এই সব মৃত্যু ব্যক্তিদের পরিবারগুলোতে ব্যাপক হারে যে সাহায্যও প্রদান করেছে তা মানবতার মহান দৃষ্টান্ত। ইতিহাসে এই সহায়তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই সাহায্যগুলো দিয়ে সরকারও খুব সুনাম অর্জন করতে থাকে । ফলে সরকারও তার উপর ব্যাপক খুশী। ব্যবসায়ী হিসেবে মারোয়ারি অত্যন্ত সফল হয়।

শাহাদাত হোসেন মান্টো কয়েক দশক আগে সমাজ ও রাজনীতিতে নানারকম মুখোশের অন্তরালে স্বার্থসিদ্ধির যে ব্যাপার থাকে সেটি উন্মোচন করে দিয়েছেন ‘ শহীদ শহীদ খেলা ‘ গল্পটিতে।

উপরোক্ত গল্পদুটোর মাধ্যমে মান্টোর গল্পের পটভূমি, চিন্তার গতিয়তা এবং সমাজকে দেখার তীক্ষ্ম দৃষ্টিঙ্গির পরিচয় সুস্পষ্ট। মান্টো সমাজকে দেখেছেন খালি চোখে। সেকারণে পুঁজিবাদী সমাজে মানুষের প্রতি মানুষের অর্থের জন্য যে একধরণের নিষ্টুরতা এবং ভোগের জন্য সে হয়ে ওঠে অমানুষ তা তিনি গল্পদুটিতে তুলে ধরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *