জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪
—- তাহা ইয়াসিন
******************
যে কোনো বিষয়ের চূড়ান্তটাই দেখতে ভালো লাগে। শূণ্যে যখন Fireworks করা হয় তখন নানা রং-বেরঙের আলো চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। একইভাবে পরিস্ফুটিত পুষ্প দেখেই নয়ন জুড়িয়ে যায় । চূড়ান্তের আগের অবস্থানটা প্রস্তুতির।যেমন করে একজন মা সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য অনেকগুলো মাস গর্ভান্তরে প্রস্তুতি নেয়। বাংলাদেশও অনেকদিন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিল ফেটে পড়ার।
ষোল বছর মানুষকে ভয়ের শিকলে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। দেশের অধিকাংশ শিল্পী ,সাহিত্যিক, সৃজনশীল রাজনীতিকরা মাথায় যা চিন্তা করতেন মুখে সেটা বলতে পারতেন না। মুখ ফসকে যারাই কিছু বলেছিলেন তারাই হয়েছেন গুম কিংবা খুন। কেউ হয়তো বিদেশ থেকে দেশের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলে ফেলেছেন অমনি তার মা-বাপ, আত্মীয়-স্বজনকে ছদ্দবেশে পুলিশ-ডি আইজি’র লোকরা ধরে নিয়ে যেতো ,মামলা দিয়ে পুরে ফেলতো জেলে।
স্কুলের একজন শিক্ষক ফেসবুকে ,ইনোস্টগ্রামে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে কিছু লিখে ফেলে বিপদে পড়েছেন। সামান্য একজন শিক্ষক বেইজ্জত হয়ে মূক হয়ে গেছেন। ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে একদল মানুষ বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড শুষে পনেরো বছর পান করে চলেছিল রক্ত। মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়া হয়েছিল একটা ছবি, কিছু শব্দ ,বাক্য আর প্রতিটি বাঙালির কাছে সেনসেটিভ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একক দখলদারিত্ব দেখিয়ে। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে যে শিশু জন্মেছিল ,যে কিশোর বেড়ে উঠছিল ,যে যুবক কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়েছে সকলে বিস্ময়ের সাথে বাংলাদেশ নিয়ে এই অরাজকতা দেখছিল।
আর গৃহ অভ্যন্তরে সংসার চালাতে না পারা পিতামাতার ফুঁপিয়ে কাঁদা লক্ষ করেছিল । এই সকল তরুণ-তরুণী মিথ্যা বাগাড়ম্বর , ভয়ের শাসন , সেই ছবি ,শব্দ ,বাক্য আর সেনসেটিভ চেতনা নিয়ে খেলা বন্ধ করার জন্য উচ্চারণ করে ওঠে ‘ বুকের ভেতর অনেক ঝড় ,বুক পেতেছি গুলি কর ‘, ‘ লাখো শহীদের রক্তে কেনা দেশটা কারো বাপের না ‘ এরকম আরো শতাধিক শ্লোগান। মানুষকে হত্যার ভয় দেখানোর চেয়ে আর শক্তিশালী হুমকি কিছু নেই। অর্থাৎ প্রাণ খতম করে দেয়া। এই ভয়কে জয় করে গৃহ-অভ্যন্তর থেকে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটানোর জন্য বেরিয়ে পড়ে ছাত্র-জনতা।
শেষাবধি ৩৬ জুলাই ২০২৪ Fireworks এর মতো অশ্রু-আনন্দ পরিস্ফুটিত হয়। ঢাকা শহর মানুষে ছয়লাপ হয়ে যায়। এই মানুষ ঢাকা শহরেই ছিল , তারা প্রতিদিনই কাজকর্ম করতে শহর চক্কর দেয়ই কিন্তু ৫ আগস্ট তারা একসাথে রাস্তায় বের হয় নতুন শহর দেখতে। তাদের কাছে যেন এতদিন এই শহর ছিল অচেনা। শহর পরিচ্ছন্ন করতে তরুণ-তরুণীরা রাস্তার কাগজ টোকাতে শুরু করে। তারা যেন এই শহরকে আদোর করে নিজেদের বলে বরণ করে নেয়। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে যারা এই পরিবর্তন নিজের চোখে দেখেছে তাদের জীবনে এর চেয়ে আর নান্দনিক কোন দৃশ্য আসবে না।
আহমদ ছফা তাঁর ‘ একাত্তর : মহাসিন্ধুর কল্লোল ‘ নামক এক প্রবন্ধের শুরুতেই যে কথাগুলো লিখেছেন স্বাধীনতার ৫৫ বছর পর ২০২৪ সালে অভ্যুত্থানের পর সেই অনুভূতিটা আমাদেরও হয়েছে। তিনি লিখেছেন , ‘ ইতিহাসে কোন কোন সময় আসে যখন এক একটা মিনিটের ব্যাপ্তি , গভীরতা এবং ঘনত্ব হাজার বছরকে ছড়িয়ে যায়। আমাদের জীবনে একাত্তর সাল সে রকম। একাত্তর সাল যারা দেখেছে ,ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে যারা বড় হয়েছে , একাত্তর সালের মর্মবাণী মোহন সুন্দর বজ্রনিনাদে যাদের বুক বেজেছে ,তারা ছাড়া অন্য কেউ একাত্তরের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। ‘
একইভাবে ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে যে পরিবর্তন ঘটে তা চাষ্কুশ যারা দেখেনি তারা এর মর্মানুভূতি হৃদয়ের গহীনে উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। জুলাই মাসে ঘরে অবরুদ্ধ থাকার পর ৫ আগস্ট একটা নতুন ঝলমলে দিন দেখার জন্য সকলের মতো পদব্রজে গণভবনের চারপাশে মানুষের ভীড়ে গমন করেছিলাম। উচ্ছ্বাসে পূর্ণ ছিল প্রতিটি মানুষের হৃদয়। কয়েকদিনের মধ্যে শহরের প্রতিটি দেয়ালে আঁকা হলো গ্রাফিতি। আন্দোলনের অন্যতম প্রাণ নতুন প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষার কথা ফুটে উঠলো তাতে , ‘বিকল্প কে? তুমি আমি সে’, ‘ এ দেশের বুকে ১৮ আসুক নেমে , ‘ মেধার বিজয়’, ‘ কারার ঐ লৌহকপাট ‘, ‘লাথি মার ভাঙরে তালা ‘, ‘ ঘুষ চাইলেই থাপ্পড় ‘ এসব।
বুক চিতিয়ে আবু সাইদ পাশে লেখা ‘ উন্নত মম শির ‘। মনে হলো নজরুল এমন এক অনুভূতি সঞ্চার করতেই ব্রিটিশের প্রতি ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তাঁর ‘বিদ্রোহী’। যখন দেশের মানুষের আত্মশক্তি ছিল ‘আজ দানবের রংমহলে তেত্রিশ কোটি খোজা-গোলাম / লাথি খায় আর চ্যাঁচায় শুধু , ‘ দোহাই হুজুর মলাম মলাম।’ নজরুল সেই মানুষকে মাথা উঁচু করে ‘ বল বীর! বল উন্নত মম শির ‘ বলে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে সেদিন নজরুলের কবিতা-গান ছিল তরুণদের মুখে মুখে।
ঢাকা শহরের দেয়ালে দেয়ালে দেখা গেল সেই জাগরণ। সেদিনের তেত্রিশ কোটি মানুষ ‘খোজা’ , ‘ নপুংসক’ হয়েছিল বলে নজরুল উল্লেখ করে তাদের জেগে ওঠার আহবান জানান। ২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থান ছিল সেরকমই অবগুণ্ঠিত মনুষ্যের আর্তচিৎকার। মানুষ সেদিনের মতোই খোজা ,নপুংসক হয়েছিল। প্রতিবাদহীন এক রোবোটিক প্রাণীতে পরিণত করা হয়েছিল মানুষকে। ঘরে ঘরে এসব মুক মানুষের সন্তানরা অচলায়তন ভেঙে বেরিয়ে আসে রাস্তায়। তাদের শ্লোগান ,গ্রাফিতিতে উঠে আসে এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
জেন.জি জেনারেশন আরেকটি শ্লোগান তোলে এবং গ্রাফিতি আঁকে ‘ তুমি কে আমি কে বিকল্প বিকল্প ‘! স্বাধীনতার পর গত ৫৫ বছরে এই রকম শ্লোগান বা মনোভাব পোষণ করে এরকমটা দেখা যায়নি। বুর্জোয়া বড় দলগুলো যে কোনো প্রকারে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চেয়েছে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য। গত পঞ্চান্ন বছর ধরে যারা ক্ষমতায় গিয়েছেন তাদের আশিভাগই নিজেদের পরিবার-পরিজনদের সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং দেশের সম্পদ লুন্ঠন করেছেন। লুন্ঠন করার জন্য যে প্রজেক্ট গ্রহন করেন সেটুকু জনগণের কিঞ্চিৎ সুবিধা দিয়েছে। কিঞ্চিৎ এজন্য যে সেগুলোর উদ্দেশ্য শুভ না হওয়ায় ভুল স্থাপনা কিংবা অহেতুক ভবনই নির্মাণ করা হয়েছে। ন্যায়ের পক্ষে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম থাকায় এসব বিষয়ে গবেষণা কিংবা কেউ কর্ণপাত করেনা।
স্বাধীনতার পর থেকে খুব অল্প সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। কখনো সামরিক শাসন কখনোবা স্বৈরশাসনে পিষ্ট হয়েছে মানুষ। এরকম অস্বাভাবিক পরিবেশে মানুষের চিন্তাজগত ক্ষীণ হয় এবং দূর আকাশপানে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখা ভুলে যায়। তাই মানুষ কামনা করে গালিভার টাইপের বিরাট কোনো একটা পরাক্রমশালী মানুষের আর্বিভাবই কেবল আমাদের মুক্তি এনে দিতে পারে।
চলমান নিষ্পেষণ থেকে মানুষ মুক্তি পাবেনা এমনটাই ভাবে। বাংলাদেশে গত ষোল বছর মানুষের মননজগত তেমনই দেখা গেছে। তুখোর রাজনৈতিক নেতাও লিখতেন ছড়া কিংবা কবিতা। সাঁতার না জানা মানুষ যেমন গহীন জলে পড়লে নানা শব্দে মুক্তির আশা ব্যক্ত করে এদেশের সচেতন মানুষ , বিরোধী রাজনৈতিক কর্মি কিংবা লেখক সাহিত্যিক ,সাংবাদিকদের অবস্থা হয়েছিল তেমন। এর মধ্যে দূর্বল নৈতিক ভিত্তি ছিল যাদের তাদের অধিকাংশই প্রাণিজ-বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নষ্টই হয়ে গেছে।
একটা দেশের সার্বিক মুক্তির জন্য কোনো অসাধারণ প্রতিভাবানের দরকার আছে কিনা সে বিষয়ে চীনা লেখক ল্যু স্যুন লিখেছিলেন,
‘আজকাল লেখক আর শিল্পীদের কাছে চিৎকার করে যত অনুরোধ জানানো হয়,তার মধ্যে আমার ধারণা সবচেয়ে জোড়ালোটি হল একজন প্রতিভাবান ব্যক্তিকে চাই, এই দাবী। এর থেকে দু’টো জিনিষ প্রমানিত হয়। প্রথমতঃ এই মুহূর্তে চীনে কোন প্রতিভাবান ব্যক্তি নেই আর, দ্বিতীয়তঃ,আমাদের আধুনিক শিল্পকলা সবাইকে ক্লান্ত ও অসুস্থ করে তুলেছে। সত্যিই কি প্রতিভাবান ব্যক্তি কেউ নেই? হয়তো আছে, কিন্তু আমরা এমন কাউকে দেখিনি, কেউই দেখেনি। কাজেই নিজেদের চক্ষু ও কর্ণের সাক্ষ্য অনুযায়ী বলা যেতে পারে, শুধু যে প্রতিভাবান কেউ নেই তাই নয়, একজন প্রতিভাবান ব্যক্তির জন্ম দেবার মতো ক্ষমতা ধরে তেমন জনসাধারণও নেই।
প্রতিভা তো প্রকৃতির কোন খেয়ালিপনা নয় যে আপনা থেকে গভীর অরণ্যে বা জনশূন্য প্রান্তরে জন্ম নেবে। জনসাধারণের এক বিশেষ অংশই এই প্রতিভাকে সৃষ্টি করে ও তার লালন পালন করে। সেই রকম জনসাধারণ না থাকলে কোন প্রতিভা থাকতেই পারে না। আল্পস পর্বত অতিক্রম করার সময় নেপোলিয়ন একরার ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি আল্পসের চেয়েও উঁচু।’ কী বীরত্বপূর্ণ উক্তি। কিন্তু তাঁর পেছনে তখন কত সৈন্য ছিল সেকথা ভুলে গেলে চলবে না। এই সৈন্যদল না থাকলে তাঁকে স্রেফ শত্রুদলের হাতে ধরা পড়তে হত, নয়তো তাড়া খেয়ে উল্টো দিকে পালাতে হত। তখন কিন্তু তাঁকে বীরের মতো তো লাগতই না, উল্টো তাঁর আচরণ দেখে তাঁকে উন্মাদ বলে মনে হত।
এইজন্যই আমার মতে একজন প্রতিভাবানের আর্বিভাব ঘটবে এই প্রত্যাশা নিয়ে বসে না থেকে আমাদের জনসাধারণকে আহবান জানানো উচিত যাদের পক্ষে একজন প্রতিভাবানের জন্ম দেওয়া সম্ভব। সুন্দর গাছ আর মনোহরী ফুল পেতে হলে প্রথমে আমাদের ভাল মাটি তৈরি করে নিতে হয়। মাটিটা কিন্তু ফুল বা গাছের চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাটি বিনা কিছুই জন্মাতে পারে না। ফুল ও গাছের পক্ষে মাটি ততটাই অপরিহার্য যেমন নেপোলিয়নের পক্ষে অপরিহার্য ছিল সৈন্যবাহিনী।
তাই আমাদের ধারণা প্রতিভার পুষ্টির জন্যে আমরা যে-কেউ ওই মাটির অংশ হতে পারি। প্রতিভাবানকে চাই বলে দাবি না জানিয়ে আমাদের বরং অবিলম্বে মাটি সংগ্রহ করা অনেক বেশী প্রয়োজন। তা না হলে যদি শতেক প্রতিভাও পাই তারা মাটির অভাবে শেকড় গাড়তে পারবে না। মাটি হতে হলে আমাদের মনকে আরো উদার করতে হবে। অর্থাৎ নতুন চিন্তাধারাকে গ্রহন করতে হবে ও পুরনো শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে যাতে আগামী দিনের প্রতিভাদের মান্য ও প্রশংসা করতে পারি।’
ল্যু সুনের সেই বক্তব্য অনুযায়ী আমাদের গালিভার আকৃতির বিরাট প্রতিভাবানের প্রতিক্ষা করতে হয়নি। স্বৈরশাসনের ছায়ার নীচে থাকা তরুণ,কিশোর-কিশোরী এবং এই ষোল বছরের অপসংস্কৃতির ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিয়েও জেন.জি ‘রা ফাগুনে দ্বিগুন ,বহুগুণ হয়ে একটা নতুন স্বপ্নের দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। মৃত্যু ছিল যাদের কাছে পাখির পালকের ন্যায় হালকা। এরাই আমাদের প্রতিভাবান।
লু স্যুন (১৮৮১-১৯৩৬) ছিলেন চিনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। তাঁর প্রকৃত নাম চৌ স্যু-ডেন । ১৯১৮ সালে তিনি ‘উন্মাদের দিনলিপি’ গল্পে ‘লু স্যুন’ নাম গ্রহণ করেন। ল্যু স্যুন নামেই চিনসহ সারা পৃথিবীতে তিনি পরিচিত। কুও মিন তাঙের কড়াকড়ির মধ্যেও লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছদ্মনামে লেখেন। ১৯২৭ সালে তিনি চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। টলস্টয় যেমন তাঁর সাহিত্যে রাশিয়ার সমাজকে আয়নার মতো লেনিনের সামনে তুলে ধরেছিলেন, লু স্যুনও চিনা সমাজকে আয়নার মতো মাও সে তুং এর সামনে তুলে ধরেছিলেন। চিন বিপ্লবের জন্য লু স্যুনের অবদান অসামান্য।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন সুভাষ বসুকে মুক্তির অগ্রদূত ভেবে গান লিখেছিলেন তেমনি কোনো এক প্রতিভাবানের প্রতীক্ষায় আমাদের অনেকেই অপেক্ষা করছেন। যিনি আমাদের জন্য সকল সুখ বয়ে আনবেন । সেই অনাগত মহান প্রতিভাবান আমাদের মাঝে আলোর মশাল নিয়ে আসবেন এবং সমস্ত অন্ধকারকে দূরীভূত করবেন। কথায় কথায় আমরা এও বলতে পছন্দ করি, ‘ রাত যত গভীর হয় প্রভাত ততই নিকটে আসে। ‘ দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের বয়স বাড়ে। তারুণ্যও গত হয়। মধ্যাহ্নের অলসতা কাটে আশায় আশায়।
মনে মনে আশার কুহক জাগে, এখনও সময় আছে, ‘ঐ যে দেখছি টগবগে তরুণ-তরুণী মিছিলের অগ্রে বহ্নিশিখার মতো জ্বলে উঠছে ওরাই রক্তিম সূর্যটা ছিনিয়ে আনবে। ‘ তারপর ক্লান্তি আর রোমন্থনে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়া সূর্যের কাছে শেষ প্রশ্নের উচ্চারণ। অনেক ক্লান্তির পর আমরা আমাদের স্বপ্নের কাছাকাছি পৌছতে পারবো এমনটি প্রত্যাশা রাখা অমুলক মনে করিনা।
চিনা সমাজেও একদিন এমন পরিস্থিতি দেখে ল্যু স্যুন ‘প্রতিভাবানের প্রতীক্ষায়’ লিখেছিলেন। আজ থেকে অনেকদিন আগের কথা। চিন সেই ঘোরতর অন্ধকার কাটিয়ে নতুন সমাজ বিনির্মাণও করেছে। আমরাও আলোর দিকে যাত্রা করতে পারবো এমন আশাবাদ বুকে ধারণ করেই চলি , কেননা ওই আশাই আমাদের সামনে চলার পথ দেখাবে।
লেখক পরিচিতি:
তাহা ইয়াসিন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে ‘নজরুলের জীবনবোধ ও চিন্তাধারা’ বিষয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। স্কুলজীবন থেকে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত। পেশাগত জীবনে কলেজ শিক্ষকতা ও দৈনিক পত্রিকায় সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালনসহ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা ১৫। বর্তমানে একটি বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও উচ্চতর গবেষণায় নিয়োজিত আছেন।
drtahayeasin@gmail.com
আরও পড়ুন …