জর্জ ফ্লয়েড

জর্জ ফ্লয়েড হত্যা

জর্জ ফ্লয়েড হত্যা

-তাহা ইয়াসিন

এক যুগ আগে মুগ্ধ হয়ে বার বার মার্টিন লুথার কিং এর I have a dream অগ্নিঝরা কাব্যিক বক্তৃতাটি শুনেছি। ২৮ আগস্ট ১৯৬৩ সালে দেয়া প্রায় ১ ঘন্টার বক্তৃতাটি কিছুদিন পর আবার শুনি, যাতে নির্মোহভাবে বুঝতে পারি। প্রথম শুনে অনেকটা আবেগ-আপ্লুত হয়েছিলাম। তাই মাস তিনেক পর আবার শুনি।

শেষবার শুনে মনে হয়েছিল তাঁর বক্তৃতার অনেক কিছুই আজ অবসিত । কালো এবং সাদা মানুষের মাঝে এখন তেমন পার্থক্য নেই। কালো এবং সাদা ছেলেমেয়েরা হাত ধরাধরি করে রাস্তায় হাঁটার দৃশ্য প্রায়শই দেখা যায়। অফিস-আদালত সবখানে উভয়ের অবাধ বিচরণ।

একইভাবে ১৮৫২ সালে প্রকাশিত Harriet Beecher Stowe এর Uncle Tom’s Cabin (আঙ্কেল টমস কেবিন) এর সেই আঙ্কেল টম বিক্রির মাধ্যমে হাত বদল হয়। যে মনিবকে সে কোলেপিঠে মানুষ করে সেই তাকে বিক্রি করে দেয় এক অত্যাচারি মালিকের কাছে । সৎ এবং বিশ্বস্ত টমকে ঘোড়ার গাড়িতে তুলেই মালিক হাতে-পায়ে পরায় লোহার বেড়ি।

টম পালানোর লোক নয় তবুও সে যে কালো তাই তার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা নেই। একসময় টমকে দিয়ে অন্য দাসদের নির্যাতন করাতে না পেরে টমকে চাবুক মারতে থাকে। আঘাতে আঘাতে টম মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মৃত্যুর সময় টম স্বপ্ন দেখে যীশু এবং ইভকে। ইভ চেয়েছিল ভেদাভেদহীন সুন্দর পৃথিবী। টম সেই আশাবাদী স্বপ্নে মৃত্যুবরণ করে।

ভেবেছিলাম অশ্রুঝরা আঙ্কেল টমের কাহিনী হয়তো আজ বইয়ের পৃষ্টায় রয়ে গেছে। বাস্তবটা এখন অনেক পরিবর্তিত। আঙ্কেল টমের স্বপ্ন অন্তত আমেরিকায় পূরণ হয়ে গেছে।

কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। মানুষে মানুষে নির্মম শোষণ যেমন নিঃশেষ হয়নি তেমনি চামড়ার রং ভেদে মানুষের পার্থক্য ইতিহাসে ঠাঁই নেয়নি। দেশে দেশে সেই ঘৃণিত বিদ্বেষ মানুষের অস্তিমজ্জায় এখনো আছে।

মানুষ বিদ্যা-বুদ্ধিতে, পোশাক-পরিচ্ছদে সুদর্শন হলেও তার পাশবিক বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। গত ২৫ মে ২০২০ আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের সাদা পুলিশ অফিসারের হাঁটুর নীচে কালো জর্জ ফ্লয়েড শরীরের সমস্ত শক্তি কন্ঠে এনে আট মিনিট ধরে প্লিজ প্লিজ করতে করতে প্রাণ ত্যাগ করে ।

এই ঘটনা দেখে মার্টিন লুথারের সেই আশাবাদ এবং আঙ্কেল টমের ভেদাভেদহীন সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন কেন যেন এখনও স্বপ্নই মনে হচ্ছে। জর্জ ফ্লয়েডের প্লিজ প্লিজ ধ্বনি বার বার কানে বাজছে। আট মিনিট ধরে কাতরাতে কাতরাতে প্রচ্ছাব গড়িয়ে গেছে তবুও জীবন রক্ষা করতে পারেনি। বার বার সে উচ্চারণ করছিল আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না! প্লি জ ! কাতরাতে কাতরাতে আস্তে করে তাঁর জীবন প্রদীপ নিভে যায়।

 

আরও পড়ুন …

জুলিয়াস ফুচিক : এক আমৃত্যু সংগ্রামী বীর

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় : বাংলা ভাষার এক একনিষ্ঠ সাধক

আমেরিকার যুগান্তকারী সংগীত শিল্পী পিট সিগার

 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *