দুর্নীতিপরায়ণ মন এবং আমাদের সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ———- যীশু ইসরাফিল

বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরপর বড় বড় দুর্নীতিবাজদের ধরা, দুর্নীতিকে না বলা, দুর্নীতির প্রতি কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেয়া- এর কোনোটাই আর বাকি নেই। এত কিছুর পরও দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি; বাড়ছেই। রাস্তায় যানবাহন থেকে নানাস্থানে চাঁদা, ঘুস নেয়া প্রত্যক্ষভাবে সর্বসাধারণ লক্ষ করে। অফিসে ঘুসগ্রহণ বহুবছর থেকে চলে আসছে। এগুলোর সাথে সাধারণ মানুষকে মানিয়ে নিতে হয়েছে। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করে দিতে, একটা চাকরি পেতেও উৎকোচ দিতে হয়। এসব তো মানুষের মাঝে কোনো ন্যায়বোধ সৃষ্টি করেনি বরং এর মধ্যেই কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা বেড়ে উঠছে।

অনেকের মাঝে এসবের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা জন্মে। সে সব উঠতি বয়সীদের কেউ কেউ সামর্থ থাকলে দেশত্যাগ করে। যাদের সামর্থ নেই তারা পিষ্ট হতে হতে অনেকে মিশে যায়, অনেকে মানসিক কষ্টে বেঁচে থাকে, অনেকে মরিয়া হয়ে দুর্নীতির ভেতরই দক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। কেউ কেউ সফলও হয়। কেউ কেউ দলাদলি, গ্রুপিং-এ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। কেউ কেউ মেরে-কেটে খুব দ্রুত বড়লোক হওয়ার পণ করে। এই যে দুর্নীতিপরায়ণতা এবং অন্যায়বোধকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে তা রোধ করার জন্য দীর্ঘ সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ আছে বলে মনে হয় না।

সেই সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটাতে পারবে দুর্নীতির সাথে যুক্ত নয় এবং যার ভেতর শুভবোধ আছে সে রকম মুক্ত মানুষেরা । এমন মানুষ সমাজে-রাষ্ট্রে আজ বিলুপ্তপ্রায়।

একসময় কি এমন হবে যে, ফ্রেস এবং শুভবোধসম্পন্ন মানুষ আমদানি করে আমাদের সমাজকে দুর্নীতিপরায়ণতা এবং অন্যায়বোধ থেকে মুক্ত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রজেক্ট গ্রহণ করতে হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *