বাংলা বানানে “ই” এবং “য়” বিভ্রাট

মাধবীলতা

বাংলা বানানে প্রায়ই দেখা যায় ভুলের ছড়াছড়ি। একটি মানসম্মত লেখাও ম্লান হয়ে যায় বানানের ভুলের কারণে। ব্যানার, ফেস্টুন, দোকান, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, সড়কের নামফলক ইত্যাদি নানা জায়গায় অনেক ভুল বানান চোখে পড়ে। এগুলো দেখে দেখে মানুষ ভুল বানানকেই অনেক সময় ঠিক মনে করে। সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্রিয়াপদের বানানে এক অদ্ভুত রকমের বিকৃতি বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে। কিছুকাল আগেও এ ধরনের ভুল এত বিস্তৃতি লাভ করেনি। আজ বানানের যে বিষয়টি নিয়ে বলতে যাচ্ছি সেটি ছড়িয়ে পড়েছে মহামারির মতো। ক্রিয়াপদগুলো ভুলভাবে এত বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যে অনেকেই ভুলটাকেই শুদ্ধ মনে করে ব্যবহার করে চলেছেন। ভাষার শুদ্ধতা রক্ষায় তাই এই বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

বানান ভুলের নেপথ্যে থাকে বানান সম্পর্কে অজ্ঞতা, অসাবধানতা ক্ষেত্রবিশেষে অবজ্ঞাও। কারণ যাই হোক, এর ফলাফল শুভ নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহারে ভালো বা মন্দ উভয়ই ছড়িয়ে যায় অত্যন্ত দ্রুততার সাথে। শিক্ষারথীরা চোখের সামনে যত বেশি ভুল বানান দেখবে ততই বানানের ভুল প্রয়োগ করবে। তাদের এই ভুল ফেসবুকের পেইজ থেকে এখন উঠে এসেছে লেখার খাতায়।বেশ কিছু সাধারণ শব্দ যেগুলো অহরহ আমাদের কথায়, লেখায় ব্যবহৃত হচ্ছে তার বানানে ই এবং য় এর মধ্যে ঘটে যাচ্ছে অদলবদল। আমায়, কোথায়, বাসায়, কয়জন, হয়তো, প্রায়, উপায়, জায়গা, সবাই, অবশ্যই, নেই, চাই, খাই, যাই ইত্যাদিকে অনেকেই যথাক্রমে আমাই, কোথাই, বাসাই, কইজন, হইতো, প্রাই, উপাই, জাইগা, সবায়, অবশ্যয়, নেয়, চায়, খায়, যায় লিখে চলেছে।

কিছু বাক্যের প্রয়োগ দেখা যাক। যেমন-

১। ছেলেটি খেলতে চাই।

২। আমি কিছু বলতে চায়।

৩। ঘরে আর জায়গা নেয়। ইত্যাদি।

একটু সতর্ক ও যত্নবান হলেই এই ভুলগুলো সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে পুরুষ ও পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়াপদের রূপ জানা থাকলেই ই ও য় এর মধ্যে এই বিপত্তি ঘটবে না। মনে রাখতে হবে-পবাংলা ভাষায় পুরুষ তিন প্রকার। উত্তম পুরুষ (1st person) , মধ্যম পুরুষ (2nd person), এবং নাম পুরুষ (3rd person)

উত্তম পুরুষ (1st person) বলতে বোঝায় : আমি, আমরা

মধ্যম পুরুষ (2nd person) বলতে বোঝায় : তুমি, তোমরা

নাম পুরুষ(3rd person) বলতে বোঝায় : সে, তারা বা তৃতীয় কোনো কোনো ব্যক্তি।

*উত্তম পুরুষ এর ক্ষেত্রে : ক্রিয়া পদ = ধাতু + ই, যেমন : আমি ভাত খাই। আমরা ভাত খাই। আমি গান গাই। আমরা গান গাই।

**মধ্যম পুরুষ এর ক্ষেত্রে : ক্রিয়া পদ = ধাতু +ও, যেমন : তুমি ভাত খাও। তোমরা ভাত খাও। তুমি গান গাও। তোমরা গান গাও।

***নাম পুরুষের ক্ষেত্রে : ক্রিয়া পদ = ধাতু +য়, যেমন : সে ভাত খায়। তারা ভাত খায়। রহিম গান গায়। সে গান গায়। তারা গান গায়। মিনা গান

গায়।

আরেকটু সহজভাবে মনে রাখতে চাইলে- উত্তম পুরুষের ক্রিয়াপদে সর্বদা ই হবে। য় বা ও নয়। আমি / আমরা যাই। আমি / আমরা খাই। আমি / আমরা পাই। আমি / আমরা চাই। আমি / আমরা ডরাই। আমি / আমরা পড়াই। আমি / আমরা চালাই। আমি / আমরা ঘুমাই।

মধ্যম পুরুষের ক্রিয়াপদে সর্বদা ও হবে। তুমি/ তোমরা যাও। তুমি / তোমরা খাও। তুমি / তোমরা পাও। তুমি / তোমরা চাও। তুমি / তোমরা ডরাও।তুমি / তোমরা ঘুমাও। তুমি / তোমরা চালাও। তুমি / তোমরা উড়াও।

নাম পুরুষের ক্রিয়াপদে য় হবে। অর্থাৎ, আমি আমরা তুমি তোমরা ছাড়া সব সর্বনাম কিংবা নাম সংশ্লিষ্ট কর্তার ক্রিয়াপদে য় হবে। সে / তারা যায়।সে / তারা খায়। সে/ তারা পায়। সে/ তারা চায়। সে / তারা ডরায়। সে/ তারা পড়ায়। সে / তারা চালায়। সে/ তারা ঘুমায়।

ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। বানানের ত্রুটি লেখার সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি অর্থের দুর্বোধ্যতা তৈরি করে। কিছুটা ব্যাকরণিক জ্ঞান, একটুখানি সদিচ্ছা ও সতর্কতা আমাদের ভাষাকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। নবীন শিক্ষার্থীদের সঠিক বানান শিক্ষার পথ সুগম করে দেওয়া আমাদেরই কর্তব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *