আঙ্কল টমস কেবিন ও লেখক হ্যারিয়েটের পরিচিতি
তাহা ইয়াসিন
বই কত শক্তশালি হতে পারে, কালো মানুষের নিষ্পেষিত জীবন-ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস আঙ্কেল টম কেবিন তার প্রমাণ। আমেরিকার লেখক হ্যারিয়েট বিচার স্টো (Harriet Beecher Stowe) এর লেখা আঙ্কেল টমস কেবিন ( Uncle Tom’s Cabin ) পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু উপন্যাসের মধ্যে একটি । এটাকে বলা চলে ব্লাক ইতিহাসের বাইবেল । বাইবেলের পরে সবচেয়ে বেশি বিক্রিও হয় বইটি । দাস প্রথার বিরুদ্ধে লেখা এমন একটি বই যা, পাল্টে দিয়েছিলো আমেরিকার ইতিহাস। উপন্যাসটি তৎকালীন আমেরিকার গৃহযুদ্ধের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এটি প্রকাশিত হয় ১৮৫২ সালে।
হ্যারিয়েটের জন্ম ১৮১১ সালের ১৪ জুন আমেরিকার কানেকটিকাটের লিচফিল্ডে। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ট। অল্প বয়সে মাকে হারান। পড়াশুনা করেন গণিত এবং ভাষা বিষয়ে। তাঁর পিতা ছিলেন ‘ লেন থিওলজিক্যাল সেমিনারির ‘ সহকারী । ২১ বছর বয়সে হ্যারিয়েট পিতাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য তার সাথেই থাকেন। হ্যারিয়েট এবং তাঁর স্বামী রেভারেন্ড কেলভিন ই.স্টো ( Reverend Calvin E. stowe) ছিলেন প্রচন্ড দাসপ্রথা বিরোধী। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁরা অনেক দাসকে মুক্ত করে আশ্রয় দেন নিজের বাড়িতে। তিনি ২০ টির বেশি বই লেখেন। আঙ্কেল টম কেবিন ছাড়াও অন্যান্য বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য , আ কী টু আঙ্কেল টম কেবিন ‘, ‘মার্ক মেরিডেন ‘, ‘ড্রেড ‘ ‘ আ টেল অব দ্য গ্রেট ডিসমাল সোয়াম্প ‘, ‘ দ্য মিনিসটার উইং ‘, ‘ ওল্ড টাউন ফীকস ‘ প্রভৃতি। হেরিয়েট ১৮৯৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
এই উপন্যাসটিতে মুক্তির গান গাওয়া ‘আঙ্কেল টম’একজন নিগ্রো ক্রীতদাস । উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ তার জীবনকে কেন্দ্র করে । আঙ্কেল টমের জীবনের ঘটনাসমূহ ক্রীতদাস প্রথার বাস্তব চিত্র ।
আঙ্কেল টম স্বপ্ন দেখে ভেদাভেদহীন একটা সুন্দর পৃথিবীর। যে পৃথিবীতে সবাই হবে সমান। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে তার ব্যক্তিত্বের কাছে হার না মেনে গেয়ে যায় মুক্তির গান। এক সময় শ্বেতাঙ্গ দাস মালিক লেগ্রির নিষ্ঠুর বেত্রাঘাতে মারা যায় টম।
উপন্যাসের শুরুতে আঙ্কেল টম মালিক শেলবির বাড়ি থেকে এলিজা এবং তার ৪ বছরের ছেলে জিমকে পালাতে সহায়তা করে। শেলবির স্ত্রী চায়নি এলিজার বুক থেকে তার ছোট শিশু সন্তান জিমকে শেলবি বিক্রি করে দিক। তাই সে যাত্রায় টম দোষী হিসেবে ধরা পড়েনি। কিন্তু উপন্যাসের শেষে অমানুষের প্রতীক লেগ্রির কেনা দুই দাসীকে পালাতে সহায়তা করার কারণে বেত্রাঘাতে জীবন দিতে হয় টমকে। পাঁজর ভাঙা বেত্রাঘাত শরীরে বরণ করে সচেতনভাবে জীবন উৎসর্গ করে টম। লেগ্রি টমকে বার বার বেত্রাঘাত করে স্বীকার করতে বলে, সে তার প্রভূ।
টম বার বারই বলে প্রভু হচ্ছে ঈশ্বর আপনি আমার মালিক। টম যদি হু বলে স্বীকার করত তাহলেই আর জীবনটা দিতে হতো না। লেগ্রির উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন কাটাতে পারতো। একজন টম কি আমাদের সমাজে এখন খুঁজে পাওয়া যাবে? কিন্তু আমরা কেহই নিজেদের দাস মনে করিনা।
টম তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য বহু বছর ধরে অপেক্ষায় করছিল। তা সত্ত্বেও জীবন উৎসর্গে টম কেঁপে উঠেনি কিংবা ভীত হয়নি। বেত্রাঘাতের পরও সততার জন্য অবিচল থেকেছে। মানুষের মাঝে কি এমন শক্তিমত্তা থাকলে মানুষ মৃত্যুকে পরোয়া করেনা সেই শিক্ষা দেয় টমের জীবন। দাস ও মালিকের মাঝে কি এমন সম্পর্ক যে একজন আরেকজনকে অত্যাচার করে কিন্তু আসমান ভেঙে পড়ে না? এসব ব্যাপারে চিরন্তন কিছু দার্শনিক তত্ত্ব এই বইয়ে আছে এবং সেই চিরন্তন তত্ত্ব আজও আমাদের সমাজে প্রবলভাবে বিদ্যমান। সেকারণে বইটি বহুদিন আগে লেখা হলেও শ্রেণি বিভক্ত প্রত্যেক সমাজে এখনও সেটার মূলসুর অনুরণিত ।
আরও পড়ুন …
তানিয়া এক মৃত্যুহীন প্রাণ ————- নুরন্নবী মোস্তফা
নারীকে বলতে হয় আমি মানুষ! ——— কনক আধিয়ার
জেলে কানাইলালকে রিভলভার দিয়েছিল ক্ষুদিরামের আত্মা