নারীকে বলতে হয় আমি মানুষ! ——— কনক আধিয়ার

পুরুষ এমনিতেই মানুষ আর নারীকে বলতে হয় আমিও মানুষ। মুখে না বললে নারীকে নারী ছাড়া মানুষ মনে হয় না। বেগম রোকেয়া শত বছর আগে নারীদের স্মরণ করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ ভগিণীগন! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন -অগ্রসর হউন! বুক ঠুকিয়া বল মা,আমরা পশু নই। বল ভগিনী আমরা আসবাব নই : বল কন্যে, আমরা জড় অলংকার-রূপে লোহার সিন্ধুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই ; সকলে সমস্বরে বল, আমরা মানুষ। ‘

সমস্বরে বলতে হয় নইলে মানুষ এটা বোঝে না। বুঝতে চায় না। সাধারণত নারীকে আসবাপত্রের মতো ঘরে রাখা বা থাকা একটা কিছু ভাবে । এভাবে ভাবা এবং নারীকে ব্যবহারী জিনিশ মনে করে সমাজের ক্ষমতাসীন কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাংলাদেশে একজনে তিন/চারহাজার নারী ব্যবহার করে, ব্যবহার করায়। সাধারণত দাস ব্যবস্থার সময় এমন করে মানুষ মানুষকে ব্যবহার করতো। বাংলাদেশে এখনো সেরকমই করা যায়। নারীদের স্বাবলম্বী না থাকা, সামাজিকভাবে হেয় অবস্থা এবং আর্থিক সংকটের কারণে এখনো ক্ষমতাসীন কিংবা পূঁজিপতি গোষ্ঠী নারীদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার তো করেই উপরন্তু তাদের দেহ বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। বড় শহরগুলোতে এ ব্যবসা আছেই। এখন অনেক এনজিও নারীর দেহ ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে।

বেগম রোকেয়া শতবছর আগে নারীদের মানুষ হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। তারপর অনেক স্রোত গড়িয়ে গেছে, রাষ্ট্রীয় সীমানায় আমরা স্বাধীন হয়েছি দু’বার। নারী এখন স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে, অনেকে ভাল চাকরিও করে কিন্তু বেগম রোকেয়ার ওই আহবান এখনকার শিক্ষিত নারীদের কানে পৌঁছেনি। অনেকে জানে কিন্তু মানেনা। প্রচলিত সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক যে বিধি-নিষেধ তার দ্বারাই তারা চলে।

উচ্চবিত্ত উচ্চশিক্ষিত ঘরে মেয়েরা থাকে শো-পিস হিসেবে । টাকা-পয়সা,ড্রাইভার আছে, যেখানে যেতে ইচ্ছে করে সেকজানেই যেতে পারে। তারা যায়ও কিন্তু নিজের ভেতরের সীমাবদ্ধতাই তাকে চালিত করে এবং বাইরের জগতকে মনে করে অস্পৃশ্য।

মধ্যবিত্ত নারীদের ফ্যাশন এখন ধর্ম। শিক্ষার জাগ্রত জ্ঞান কিংবা আলোর দিকটা বাদ দিয়ে সুবিধাটুকু নিয়ে ধর্মীয় কায়দা-কানুনকে নিজের ভালোলাগা মন্দলাগার সাথে মিলিয়ে চলে। তাদের ভালোলাগা, মন্দলাগার সীমানা পিতামাতা,ধর্ম,স্বামী দ্বারা বেঁধে দেয়া হয় । যা তারা নিজেরা মেনে চলে। মেনে চলতে না পারলে নিজেরাই অস্বস্তি বোধ করে ।
মধ্যবিত্ত শিক্ষিত এই নারীরা পোষা প্রাণীর মতো ভালোই আছে বলে নিজেরা ভাবে।

নিন্মবিত্ত শ্রেণির নারীদের অবস্থান যুগ-যুগান্তর থেকে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মতই ।
নারীবাদ,নারীদিবস ইত্যাদি নারীকে রান্নাঘর থেকে উন্মুক্তবিশ্বে বের করে অনুভতিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখেয়েছে। এই ভাবতে পারাটাই কিছুটা অগ্রগতি। এরপরেও তৃতীয় বিশ্বে নারী এখনও পণ্য, ভোগ্য মাল হিসেবে বিবেচিত ; যাদের মাথার উপর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। এই আকাশ পরিষ্কার করবে কে ? নারী নাকি পুরুষ ? সেটা এখনো বাংলাদেশ, ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোতে ঠিক হয় নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *